বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই ভূমিকম্প একটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে বিবেচিত। “ভূমিকম্প অনুভূত” শব্দটি আজকাল খবরের শিরোনাম হয়ে উঠেছে, যা মানুষের মনে ভয়ের ছায়া ফেলছে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা জানবো কেন ভূমিকম্প হয়, কীভাবে এর অভিঘাত বোঝা যায়, বাংলাদেশের ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলগুলো, পূর্বপ্রস্তুতির উপায়, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এবং সরকারের ভূমিকম্প মোকাবিলায় নেওয়া পদক্ষেপ।
ভূমিকম্প কী ও কেন হয়?
ভূমিকম্প হলো ভূ-পৃষ্ঠের অভ্যন্তরে সংঘটিত হঠাৎ শক্তি নির্গমনের ফলে সৃষ্ট কম্পন। এটি সাধারণত ভূত্বকের প্লেটগুলো সংঘর্ষ, সরে যাওয়া বা ফাটলের কারণে ঘটে। পৃথিবীর ভূত্বক একাধিক টেকটোনিক প্লেটে বিভক্ত, যেগুলো একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খায়, বিচ্ছিন্ন হয় বা চাপের ফলে একে অপরের ওপর উঠে যায়। এ প্রক্রিয়ার ফলেই ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়।
👉 বিস্তারিত জানতে পারেন USGS ওয়েবসাইটে।
বাংলাদেশে ভূমিকম্প: অতীত ও বর্তমান
বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি ভূমিকম্প-প্রবণ দেশ। ভারতীয় ও ইউরেশিয়ান প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় এ অঞ্চলে মাঝারি থেকে বড় মাত্রার ভূমিকম্প প্রায়ই হয়ে থাকে।
কিছু উল্লেখযোগ্য ভূমিকম্প:
- ১৮৯৭ সালের আসাম ভূমিকম্প (মাত্রা ৮.১)
- ১৯১৮ সালের সিলেট ভূমিকম্প (মাত্রা ৭.৬)
- ২০০৯ সালে ঢাকা, চট্টগ্রামে অনুভূত ভূমিকম্প (মাত্রা ৫.১)
- ২০২২ সালে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুভূত ভূমিকম্প
ভূমিকম্প অনুভব হলে কী করণীয়?
ভূমিকম্প চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে সচেতনতা জীবন বাঁচাতে পারে। নিচে কিছু করণীয় বিষয় দেওয়া হলো:
ভূমিকম্প চলাকালীন:
- মাথা ও ঘাড় ঢেকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিন
- জানালা, দরজা ও ভারী আসবাবপত্র থেকে দূরে থাকুন
- শক্তিশালী মেঝে বা টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন
ভূমিকম্পের পর:
- গ্যাস সংযোগ ও বৈদ্যুতিক লাইন পরীক্ষা করুন
- আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিন
- বহুতল ভবন থেকে দ্রুত বের হয়ে খোলা জায়গায় যান
ভূমিকম্পের পূর্বাভাস কি দেওয়া যায়?
বর্তমানে সুনির্দিষ্টভাবে ভূমিকম্পের দিন, সময় বা স্থান আগাম জানানো সম্ভব নয়। তবে কিছু প্রযুক্তি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (যেমন: USGS Earthquake Early Warning System) ভূমিকম্পের মুহূর্তে সতর্কবার্তা পাঠানোর প্রযুক্তি উন্নয়ন করছে।
📊 বাংলাদেশের ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলসমূহ
বাংলাদেশে যেসব অঞ্চল বেশি ঝুঁকিপূর্ণ:
অঞ্চল | ঝুঁকির মাত্রা |
সিলেট | খুব বেশি |
চট্টগ্রাম | বেশি |
ঢাকা | মাঝারি |
কক্সবাজার | বেশি |
ময়মনসিংহ | মাঝারি |
👉 Bangladesh Geological Survey: bgs.gov.bd
ভূমিকম্প প্রতিরোধে প্রস্তুতি ও করণীয়
- ভবন নির্মাণ কোড অনুসরণ করা
- নিরাপত্তামূলক মহড়া (Earthquake Drill) আয়োজন
- স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা
- ভূমিকম্প বিমা গ্রহণ
- পারিবারিক প্রস্তুতি কিট তৈরি রাখা (টর্চ, পানির বোতল, ওষুধ, রেডিও)
সরকারের ভূমিকা
সরকার ইতোমধ্যে BNBC (Bangladesh National Building Code) বাধ্যতামূলক করেছে, এবং RAJUKসহ বিভিন্ন সংস্থা ঝুঁকি নিরসনে কাজ করছে। এছাড়া দুর্যোগ মোকাবেলায় Disaster Management Bureau গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
শেষ কথা (উপসংহার)
ভূমিকম্প একটি অনিবার্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও সচেতনতা, পূর্বপ্রস্তুতি এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এর ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। আমাদের প্রত্যেকের উচিত এই বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা, মহড়া দেওয়া এবং পরিবার ও সমাজকে সচেতন করা। ভবিষ্যতের যেকোনো বিপর্যয় মোকাবেলায় এই প্রস্তুতিই হতে পারে বাঁচার চাবিকাঠি।
কিছু প্রশ্নোত্তর (FAQs)
প্রশ্ন ১: বাংলাদেশে ভূমিকম্প বেশি হয় কেন?
উত্তর: বাংলাদেশ একটি সক্রিয় টেকটোনিক অঞ্চলে অবস্থিত, যেখানে ভারতীয় ও ইউরেশিয়ান প্লেটের সংযোগ রয়েছে।
প্রশ্ন ২: ভূমিকম্প কীভাবে পূর্বাভাস দেওয়া যায়?
উত্তর: যদিও নির্ভুলভাবে পূর্বাভাস দেওয়া যায় না, কিছু প্রযুক্তি তাত্ক্ষণিক কম্পন শনাক্ত করে সতর্কবার্তা পাঠাতে পারে।
প্রশ্ন ৩: ভূমিকম্পের সময় কোন স্থানে নিরাপদ?
উত্তর: শক্ত টেবিল বা ডেস্কের নিচে, জানালা থেকে দূরে, খোলা জায়গা সবচেয়ে নিরাপদ।
প্রশ্ন ৪: ভূমিকম্পের সময় বহুতল ভবনে কী করা উচিত?
উত্তর: সিঁড়ি ব্যবহার করে নিচে নেমে যাওয়া এবং বহির্ভাগের কোনো জায়গায় অবস্থান করা নিরাপদ।
প্রয়োজনীয় আরো পোস্ট সমূহ:-
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔
নোট : এই কনটেন্ট এর সকল ইনফরমেশন গুলো অনলাইন থেকে সংগৃহীত।